প্রকাশিত: Sun, Jun 18, 2023 11:54 PM
আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 12:57 PM

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা

নবজাতকের পর মায়েরও মৃত্যু

মাজহারুল ইসলাম: রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া নবজাতকের মা মাহমুদা রহমান আঁখি রোববার দুপুরে ল্যাবএইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। মা ও সন্তানের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। সূত্র: সময়টিভি অনলাইন

এর আগে শনিবার স্বামী ইয়াকুব আলী জানিয়েছিলেন, আঁখির শরীরিক অবস্থা আরো অবনতি হয়েছে। সারা শরীরে ফোসকা পড়ে শরীর সম্পূর্ণ কালো হয়ে গেছে। ডায়ালাইসিসে কাজ হচ্ছে না। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে, এখনো জ্ঞান ফেরেনি। স্বামী এমন তথ্য দেয়ার একদিন পরই মারা গেলেন আঁখি। সূত্র: চ্যানেল২৪ অনলাইন

জানা যায়, ফেসবুকে গাইনি চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার নরমাল ডেলিভারি সংক্রান্ত ভিডিও ও পরামর্শ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন আঁখি। সেই চাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী। আর সেটাই কাল হলো তার জন্য। জন্মের সময়ই মারা যায় নবজাতক। 

গত শুক্রবার প্রসব বেদনা শুরু হয় আঁখির। সেই রাতেই ডেলিভারির জন্য ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে প্রসূতি আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করালে ডা. সংযুক্তা সাহার বদলে ডা. মিলি ডেলিভারি করতে যান। কিন্তু ডা. মিলি ওই প্রসূতির পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন আঁখি। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বাচ্চা বের করার পর বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে। সেই সময়ে ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না, তবুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তিনি আছেন এবং অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন। 

এ ঘটনার পর আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ল্যাবএইডের চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছিল না, এমনকি তার রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না। এরমধ্যে ব্রেন স্টোকও করে আঁখি। 

এই ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর বুধবার ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা হয়। মামলায় ডা. শাহজাদী, ডা. মুনা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর বুধবার রাতেই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত পরিদর্শন টিম গত শুক্রবার বিকেলে সেন্ট্রাল হাসপাতাল পরিদর্শন করে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালটিতে আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিতে পারবেন না বলেও জানানো হয়। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব